সূরা ফজরের ১০ নং আয়াতের তাফসীর
وَفِرْعَوْنَ ذِي الأَوْتَادِ
শব্দার্থঃ فِرْعَوْنَ = ফেরআউন। ذِي = অধিকারী, অধিপতি, ওয়ালা। الأَوْتَادِ = কীলকসমূহ।
অর্থঃ এবং কীলকসমূহের অধিকারী ফেরআউনের সাথে। [আয়াত ১০]
তাৎপর্যঃ
فِرْعَوْنَ :
ফেরআউন বলতে উদ্দেশ্য হল মিশরের শাসক। এটা তার উপাধি। এটা হিব্রæ থেকে আরবিতে এসেছে। এর মূল অর্থ কী তা জানা যায়নি। এই উপাধি মিশরের শাসকদের আগেও [বা ইউসুফ আ. এর আগে] ছিল এবং পরেও [বা মূসা আ.-এর সময়] ছিল। কোরআন এ শব্দটি মিশরের শাসক ব্যতীত অন্য কোনো দেশের শাসকের ব্যাপারে ব্যবহার করেনি। তবে মধ্যবর্তী সময় তথা ইউসুফ আ.-এর সময়ে মিশরের শাসকের উপাধি ছিল ‘মালিক’ বা রাজা। কারণ, তখন মিশরকে শাসন করত হিকসোস গোষ্ঠী। তারা মিশরের বাইরের গোত্র ছিল। তারা বনি ইসরাইলদের সাহায্য নিয়ে মিশরের শাসক তথা ফেরআউনকে উৎখাত করতঃ ক্ষমতা দখল করে। তখন নিজেদেরকে তারা রাজা বলে ঘোষণা দেয়। কিন্তু পরবর্তীতে মিশরীয়রা আবার তাদেরকে হঠিয়ে দিয়ে ক্ষমতা করায়ত্ব করে এবং নিজেদের ফেরআউন উপাধি পুনরুদ্ধার করে। তারা ক্ষমতায় এসে বনি ইসরায়েলদের উপর নির্যাতন করে। কারণ, তারা ভিনদেশী লোকদেরকে মিশরের ফেরআউনী প্রথা উৎখাত করতে সহযোগিতা করেছিল।( ) এখানে ফেরআউন বলে মূসা আ. এর সময়কালে যে শাসক ছিল সেটা উদ্দেশ্য। কোরআন তার ধ্বংসের কথা বর্ণনা করেছে। অন্য কোনো ফেরআউনের ধ্বংসের বর্ণনা কোরআন দেয়নি।
ذِي الأَوْتَادِ :
কীলকের অধিকারী বা অধিপতি। এর কারণ হল, বলা হয় যে, ফেরআউনের চারটি কীলক ছিল। যখন কেউ তার সাথে বিদ্রোহ পোষণ করত বা তার নির্দেশ অমান্য করত তখন তার হাত কীলক দিয়ে আটকে দিত যাবৎ সে মরে যেত। আবু হুরায়রা রাদ্বি. বলেন, ফেরআউন তার স্ত্রী আসিয়াকে চারটি পেরেক দিয়ে আটকে দিল এবং তার বুকে একটি যাতা রাখল। অতঃপর তাকে সূর্যের দিকে মূখ করে রাখল। তিনি বা আসিয়া তাঁর মাথা আকাশের দিকে উত্তোলন করলেন এবং বললেন, হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি নির্মাণ করুন। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা জান্নাতে তার বাড়িকে উন্মুক্ত করে দিলেন। অতঃপর তিনি তা দেখলেন। আবার বলা হয়, ذِي الأَوْتَادِ দ্বারা গুণান্বিত করার কারণ হল, তার রাজত্ব বিভিন্ন পিরামিড ধারণ করত যা উল্টো লোহার ন্যায় ছিল। কারণ, এর নিম্নভাগ লোহার মাথার ন্যায় প্রশস্ত হয়ে উপরিভাগ লোহার মতো সরু। আবার এটাও উদ্দেশ্য হতে পারে যে, কীলকের অধিকারীকে রূপকার্থে দৃঢ়তা ও স্থিরতা বোঝানো হয়েছে। কারণ, লোহা যেখানে প্রোথিত করা হয় সেটা সেখানে স্থির ও অটল থাকে। অর্থাৎ- এর দ্বারা শক্তি বোঝানো উদ্দেশ্য। কারণ, সে তার জাতিকে বাধ্য করেছিল পিরামিড তৈরি করতে যেখানে তার লাশ থাকবে। আবার বলা হয়, কীলক বলার কারণ হল, তার চার প্রকার সৈন্য ছিল। তারা হল: জুনুদ, আসাকের, জুমু’ এবং জুয়ুশ। আর তার রাজত্ব রক্ষণাবেক্ষণ করত -এমনটি বলেছেন ইবনে আব্বাস। আবার বলা হয়, ذِي الأَوْتَادِ বলার কারণ হল, তার অনেক সৈন্য ছিল। তারা যখন কোথাও তাঁবু গাড়ত, তারা অনেক লোহা ব্যবহার করত। এছাড়াও আরো কারণ আছে। তবে সারকথা হল, এটা বলে সে যে অনেক শক্তির অধিকারী ছিল এবং অন্যায়-অত্যাচার করত তা বোঝানো উদ্দেশ্য। এবং এতো শক্তিশালী ফেরআউনকেও আল্লাহ তায়ালা ধ্বংস করেছেন। তাই সেদিকে আল্লাহ রাসূলুল্লাহ স. কে বলেছেন, আপনি কি দেখেননি কীলকসমূহের অধিকারী শক্তিশালী ফেরআউনকে কীভাবে পানিতে ধ্বংস করেছেন?( )