তাফভীযে তালাক বা স্ত্রীকে তালাক গ্রহণ করার ক্ষমতা প্রদান করা

আলহামদুলিল্লাহ রাব্বিল আলামীন ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসূলিল্লাহ ওয়া আলিহি ও সাহবিহি আজমাইন।

অতঃপর,

তালাকের একচ্ছত্র অধিকারী হলেন স্বামী। তিনি চাইলে স্ত্রীকে তালাক গ্রহণ করার ক্ষমতা প্রদান করতে পারেন যাকে তাফভীযে তালাক বলা হয়। তাফভীযে তালাক দুইভাবে হতে পারে। প্রথমতঃ কোনো মজলিসে ক্ষমতা প্রদান করা। দ্বিতীয়তঃ লিখিত আকারে সর্বদার জন্য। আর এই ক্ষমতা প্রদান বিভিন্ন শব্দের দ্বারা হয়ে থাকে।

প্রথমটির ক্ষেত্রে ক্ষমতার দীর্ঘায়িত হওয়ার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। আলী রাদ্বি., আবু ছাওর, আল-হাকাম, ইবনুল মুনযির বলেন, এটা উক্ত মজলিসের সাথে সম্পৃক্ত নয়। এটা সর্বদার জন্য প্রযোজ্য হবে। তবে মালেক, শাফেয়ী ও আসহাব আল-রায় বলেন, এই ক্ষমতা উক্ত মজলিসের মধ্যেই সীমিত থাকবে। মজলিস ভেঙ্গে গেলে উক্ত ক্ষমতা রহিত হয়ে যাবে।

দ্বিতীয়তঃ লিখিত আকারে সর্বদার জন্য স্ত্রীকে তালাক গ্রহণ করার ক্ষমতা প্রদান করা। আর এটা আমাদের দেশে প্রচলিত নিয়ম যেটা লিখিত আকারে স্ত্রীকে তালাক গ্রহণ করার ক্ষমতা প্রদান করা যা সরকারী ভাবে কাবিননামায় হয়ে থাকে। এই ক্ষমতা প্রদান করার ফলে স্ত্রী যেকোনো সময় তালাক গ্রহণ করতে পারবে। স্বামী যদি কাবিননামায় স্বাক্ষর করে থাকে তাহলে স্ত্রী উক্ত ক্ষমতার অধিকারিনী হবে। সুতরাং, পরবর্তীতে স্বামী যদি বলে যে, সে তার স্ত্রীকে মৌখিক ভাবে তালাক গ্রহণ করার ক্ষমতা প্রদান করেনি –এ বিষয়ে তার কোনো অভিযোগ গ্রহণ করা হবে না। আর যদি কেউ বিয়ের সময় কাবিননামায় স্বাক্ষর না করে অথবা কাবিননামা না করেই থাকে, তাহলে স্ত্রী উক্ত ক্ষমতার অধিকারিনী হবে না।

কত তালাক গ্রহণ করতে পারবেঃ

যদি স্বামী স্ত্রীকে তিন তালাক গ্রহণ করার ক্ষমতা দিয়ে থাকে তাহলে সে স্ত্রী তিন তালাক গ্রহণ করার ক্ষমতা পাবে। আর তিন তালাকের অধিকার দিয়ে না থাকলে সে এক তালাক গ্রহণ করার ক্ষমতা পাবে। কিন্তু সরকারী ভাবে যে ক্ষমতা দেয়া হয়ে থাকে তা তিন তালাকের বিষয়টি স্পষ্ট নয়। পরন্তু, সরকারীভাবে তিন তালাকের বিধান কার্যকরী নয়, তাই সরকারীভাবে স্ত্রীকে যে ক্ষমতা প্রদান করা হয় সেক্ষেত্রে স্ত্রী কর্তৃক তালাক গ্রহণ করার দ্বারা এক তালাক বায়েন হবে। সুতরাং, প্রশ্নে উল্লেখিত এক তালাক, দুই তালাক ও তিন তালাক গ্রহণ করার বিষয়টি এক তালাক বলে গণ্য হবে।

আর যদি স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাক গ্রহণ করার ক্ষমতা প্রদান করা না হয়, এবং তাদের মাঝে বনিবনা না হয় সেক্ষেত্রে স্ত্রী কিছু বিনিময়ের মাধ্যমে খোলা তালাক গ্রহণ করতে পারবে। যদি স্বামী এতে সম্মতি প্রদান না করে তাহলে কাযী অথবা কোর্ট তাদের বিয়ে ভেঙ্গে দেয়ার ক্ষমতা রাখে।

উপসংহারঃ

তালাক বৈধ কাজের মধ্যে একটি ঘৃণীত কাজ। এটাকে পরিহার করাই বাঞ্ছনীয়। আপসে মীমাংসা করার মাধ্যমে সংসার বজায় রাখার মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে।

দেখুনঃ তোহফাতুল ফুকাহা, ২/১৮৭, বাদায়ে আল-সানায়ে‌’ ৬/১৩৮-১৩৯, তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/২৯৭, আল-এনায়া ৫/২৮৬, ফাতহুল কাদীর, ৮/১৮১।

Share this:

Leave a Comment