সূরা আল-নাবা’ [আন-নাবা’]

Print Friendly, PDF & Email

সূরার পরিচিতি

সূরার নামঃ
নাবা’। সূরাটি মাক্কী। অবতীর্ণ হওয়ার দিক দিয়ে ৮০ তম। সূরা নং ৭৮, আয়াত সংখ্যা-৪০, আরেক মতে ৪১। শব্দসংখ্যা ১৭৩ টি। অক্ষর ৭৭০টি।

সূরার অন্যান্য নামসমূহঃ
এ সূরাকে আম্মা বা আম্মা ইয়াতাসাআলূন এবং সূরাতুত তাসা-উল’ও বলা হয়, আবার সূরাতুল মু‘সিরাত’ও বলা হয়।( )
এ সূরাটি শুরু হয়েছে একটি ভীতিকর, ভয়প্রদ এবং বাস্তবতাকে প্রকাÐকরণের মাধ্যমে। পূর্ববর্তী সূরা আল-মুরসালাত এর সাথে এ সূরার সম্পর্ক হল তিনভাবেঃ
প্রথমতঃ উভয় সূরা পরকাল সম্পর্কে কথা বলেছে এবং দলিল দিয়ে এর সত্যতা প্রমাণ করেছে। আল্লাহ তার কুদরতের কথা বলেছেন। মিথ্যুক কাফেরদের ভর্ৎসনা করেছেন। যেমন, মুরসালাত সূরায় আছে, আল্লাহ বলেন, আমরা কি পূর্ববর্তীদেরকে ধ্বংস করিনি? আমরা কি তোমাদেরকে তুচ্ছ পানি থেকে সৃষ্টি করিনি? আমরা কি ভূমিকে সংযুক্ত বানাইনি? আর এ সূরাতে বলেছেন, আমরা কি ভূমিকে দোলনা বা বিছানা বানাইনি?
দ্বিতীয়তঃ উভয় সূরাতেই জান্নাত ও জাহান্নামের বর্ণনা আছে। মুত্তাকীদের আরাম-আয়েশ ও কাফেরদের শাস্তির কথা উল্লেখ আছে, এবং কিয়ামত দিবসের ভীতির কথা বর্ণিত আছে।
তৃতীয়তঃ পূর্ববর্তী সূরাতে যা সংক্ষিপ্ত আছে এ সূরায় তা বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে। যেমন পূর্ববর্তী সূরাতে বলেন, কোন দিনের জন্য অবকাশ দেয়া হয়েছে? বিচার দিবসের জন্য। আপনি কি জানেন বিচার দিবস কী? [আয়াত-১২-১৪]। আর এ সূরায় বলেন, বিচার দিবসের জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট সময়। [আয়াত-১৭]( )
শানে নুযুলঃ
ইবনে জারীর তাবারী ও ইবনে আবু হাতেম হাসান বসরী থেকে বর্ণনা করেন, আল্লাহ যখন রাসূলুল্লাহ সা. কে প্রেরণ করলেন তখন মক্কার কাফেররা পরস্পরে জিজ্ঞাসা করত। তখন আল্লাহ অবতীর্ণ করলেন, عَمَّ يَتَسَآءَلُونَ عَنِ النَّبَإِ الْعَظِيمِ।( )
এ সূরা যা ধারণ করেঃ
এ সূরার মূল মানদÐ হল বিভিন্ন প্রমাণাদির মাধ্যমে পুনরুত্থান প্রমাণ করা। এ কারণে সূরাটি ১-৫ আয়াত মুশরিকদের কর্তৃক এ ব্যাপারে প্রশ্ন করার মাধ্যমে এবং কিয়ামত দিবসের সংবাদ প্রদানের
আল-কোরআন আল-কারীম-এর তাফসীর বিশ্বকোষ আমপারা / প্রথম খÐ ২০

মাধ্যমে শুরু হয়েছে, এবং এর অনুগামী হাশর, নশর ও কৃতকর্মের প্রতিদান। আর পরকালকে অস্বীকার করার কারণে মুশরিকদেরকে হুমকি-ধমকি প্রদান করা হয়েছে।
অতঃপর ৬-১৬ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা এ জগৎ সৃষ্টির মাঝে আশ্চর্যজনক যে সকল সৃষ্টি আছে তা উল্লেখ করার মাধ্যমে পরকালে মানবজাতিকে পুনরায় জীবিত করা হবে তার যথাযথ সম্ভাব্যতা প্রমাণ করেছেন। যেমন তিনি বলেন, ‘আমরা কি পৃথিবীকে দোলনা বানাইনি?’ [নাবা’, আয়াত-৬]
অতঃপর ১৭-২০ আয়াতে এ সূরাটি বলে দিয়েছে যে, পরকাল ও বিচার দিবসের দিন ধার্যকৃত যেদিন প্রথমকার ও শেষকার সকল সৃষ্টিজীবকে একত্র করা হবে। যেমন তিনি বলেন, ‘বিচার দিবসের দিন সুনির্দিষ্ট।’ [সূরা নাবা’, আয়াত-১৭]
অতঃপর ২১-৩৮ আয়াতে ভীতিপ্রদর্শন ও উৎসাহপ্রদানের মাধ্যমে কাফেরদের শাস্তি ও মুত্তাকীদের নেয়ামতের কথা বর্ণনা করেছেন।
অতঃপর সূরাটি শেষ হয়েছে পরকাল অত্যাবশ্যকীয় হওয়ার সংবাদ প্রদানের মাধ্যমে, এবং কাফেরদেরকে অতি সন্নিকটে অপেক্ষমান শাস্তির কথা বলে সতর্ক প্রদান করেছেন যখন তারা শাস্তির তীব্রতা অবলোকন করার ফলে মাটি হওয়ার বাসনা প্রকাশ করবে।
এ সূরাটি ভয়-ভীতি, হুমকি-ধমকি দিয়ে পরিপূর্ণ। এটা পাঠ করার মাধ্যমে একজন পাঠকের মনে কিয়ামতের ভয়ংকর রূপ ও কাঠিন্য সম্পর্কে ভীতির সঞ্চার হবে।( )

Share this:

Leave a Comment