সহিহ হাদিসে কুদসী

গরিবকে সুযোগ দেয়া ও ক্ষমা করার ফযিলত


عَنْ حُذَيْفَةَ ঃ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ  : ((تَلَقَّتِ الْمَلَائِكَةُ رُوحَ رَجُلٍ مِمَّنْ كَانَ قَبْلَكُمْ فَقَالُوا: أَعَمِلْتَ مِنْ الْخَيْرِ شَيْئًا؟ قَالَ: لَا، قَالُوا: تَذَكَّرْ. قَالَ: كُنْتُ أُدَايِنُ النَّاسَ فَآمُرُ فِتْيَانِي أَنْ يُنْظِرُوا الْمُعْسِرَ وَيَتَجَوَّزُوا عَنْ الْمُوسِرِ قَالَ: قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلّ: تَجَوَّزُوا عَنْهُ)).
أخرجه مسلم في الصحيح في رقم ২৬-১৫৬০، والبخاري في الصحيح في رقم ১৯৭১، واللفظ لمسلم. والحديث صحيح.

৪৮. হুযায়ফা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের পূর্বেকার জনৈক ব্যক্তির রূহের সাথে ফেরেশতারা সাক্ষাৎ করে বলে, তুমি কি কোনো কল্যাণকর কোনো কাজ করেছ? সে বলে, না। তারা বলেন, স্মরণ কর। সে বলবে, আমি মানুষদের ঋণ দিতাম। অতঃপর আমার যুবকদের বলতাম তারা যেন গরীবদের অবকাশ দেয় এবং ধনীদের গড়িমসি ক্ষমা করে। আল্লাহ বলেন, তাকে ক্ষমা কর। [সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৬-১৫৬০, ও সহিহ বুখারি, হাদিস নং ১৯৭১], হাদিসটি সহিহ।

ব্যাখ্যাঃ
এ হাদিসে গরিবদেরকে সুযোগ দেয়া বা ঋণের কিছু অংশ মওকুফ করা বা পূর্ণ ঋণ মওকুফ করার ফযিলত বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘আর যদি অভাবগ্রস্থ হয় তাহলে তাকে ধনী হওয়া পর্যন্ত সময় দেওয়া, আর সদকা করা তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা জানতে।’ [সূরা বাকারা, আয়াত-২৮০]
সহিহ মুসলিম-এ আছে (হাদিস নং ১৫৬৩), রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যাকে এটা আনন্দিত করে যে আল্লাহ কিয়ামত দিবসে তার মসিবত দূর করবেন, তাহলে সে যেন গরিবদেরকে তার প্রাপ্য পরিশোধের ব্যাপারে সময় দেয় অথবা তা ক্ষমা করে দেয়।’
সহিহ মুসলিম এর আরেক হাদিসে আছে (হাদিস নং ২৬৯৯), রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি এ দুনিয়ায় মু’মিনের কোনো মসিবত দূর করবে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামত দিবসে তার একটি মুসিবত দূর করবেন। আর যে ব্যক্তি গরিবদের প্রতি সহজ করবে আল্লাহ তার প্রতি দুনিয়া ও আখেরাতে সহজ করবেন। যে ব্যক্তি মুসলিমের কোনো দোষ গোপন রাখবে আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতে তার দোষ গোপন রাখবেন। আল্লাহ তার বান্দার সাহায্যে ততক্ষণ পর্যন্ত থাকবেন যতক্ষণ সে তার ভাইয়ের সাহায্যে লিপ্ত থাকবে।’

৪৯-
عَنْ أَبِي مَسْعُودٍ ঃ قَالَ: قَـالَ رَسُولُ اللَّهِ  : ((حُوسِبَ رَجُلٌ مِمَّنْ كَانَ قَبْلَكُمْ فَلَمْ يُوجَدْ لَهُ مِنْ الْخَيْرِ شَيْءٌ إِلَّا أَنَّهُ كَانَ يُخَالِطُ النَّاسَ، وَكَانَ مُوسِرًا فَكَانَ يَأْمُرُ غِلْمَانَهُ أَنْ يَتَجَاوَزُوا عَنْ الْمُعْسِرِ، قَالَ: قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: نَحْنُ أَحَقُّ بِذَلِكَ مِنْهُ تَجَاوَزُوا عَنْهُ)).
أخرجه مسلم في الصحيح في رقم ৩০-১৫৬১، والحديث صحيح.

৪৯. আবু মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের পূর্বের জনৈক ব্যক্তিকে জেরা করা হল, কিন্তু তার কোনো কল্যাণ পাওয়া গেল না। সে ছিল ধনী। মানুষের সাথে লেনদেন করত আর তার দাসদের (যারা টাকা আদায় করত) বলত তারা যেন গরিবকে ক্ষমা করে।’ তিনি বলেন, ‘আল্লাহ বলেন, তার চেয়ে আমি ক্ষমা করার অধিক হকদার। তাকে ক্ষমা কর।’ [সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৩০-১৫৬১], হাদিসটি সহিহ।

৫০-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ঃ: عَنْ رَسُولِ اللَّهِ  قَالَ: (( إِنَّ رَجُلاً لَمْ يَعْمَلْ خَيْرًا قَطُّ، وَكَانَ يُدَايِنُ النَّاسَ فَيَقُولُ لِرَسُولِه: خُذْ مَا تَيَسَّرَ وَاتْرُكْ مَا عَسُرَ وَتَجَاوَزْ، لَعَلَّ اللَّهَ تَعَالَى أَنْ يَتَجَاوَزَ عَنَّا، فَلَمَّا هَلَكَ قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ لَهُ: هَلْ عَمِلْتَ خَيْرًا قَطُّ؟ قَالَ: لَا إِلَّا أَنَّهُ كَانَ لِي غُلَامٌ وَكُنْتُ أُدَايِنُ النَّاسَ فَإِذَا بَعَثْتُهُ لِيَتَقَاضَى قُلْتُ لَهُ: خُذْ مَا تَيَسَّرَ وَاتْرُكْ مَا عَسُرَ وَتَجَاوَزْ لَعَلَّ اللَّهَ يَتَجَاوَزُ عَنَّا، قَالَ اللَّهُ تَعَالَى: قَدْ تَجَاوَزْتُ عَنْكَ)).
أخرجه النسائي في السنن في رقم ৪৬৯৪، وأحمد في المسند في رقم ৮৭১৫، وابن حبان في الصحيح في رقم ৫০৪৩، إسناده حسن، لأن في إسناده محمد بن عجلان، وهو صدوق.

৫০. আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘জনৈক ব্যক্তি কোনো কল্যাণ করেনি তবে সে লোকদেরকে ঋণ দিত। অতঃপর তার দূতকে বলত, যা সহজ তা গ্রহণ কর, আর যা কষ্টকর তা ত্যাগ কর ও ক্ষমা কর; হয়তো আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ক্ষমা করবেন। যখন সে মারা গেল, আল্লাহ তাকে বললেন, তুমি কি কোনো উত্তম কাজ করেছ? সে বলল, না, তবে আমার এক কর্মচারী ছিল, আমি মানুষকে ঋণ দিতাম, যখন আমি তাকে উসুল করার জন্য প্রেরণ করতাম তাকে বলতাম, যা সহজ হয় তা গ্রহণ কর আর যা কষ্টকর তা ত্যাগ কর ও ক্ষমা কর; হয়তো আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ বলেন, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম।’
[সুনান নাসায়ী, হাদিস নং ৪৬৯৪, মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ৮৭১৫, সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং ৫০৪৩], হাদিসটি হাসান।

Share this:

Leave a Comment