মানুষ যেন তার খাদ্য নিয়ে গবেষণা করে

Print Friendly, PDF & Email

মানুষ যেন তার আহার নিয়ে গবেষণা করে
فَلْيَنْظُرِ الإِنْسَانُ إِلَى طَعَامِهِ
অর্থঃ মানুষ যেন তার খাদ্যের দিকে দৃষ্টি দেয়। [আয়াত ২৪]

তাৎপর্যঃ
فَـ : الْفَاءُ
এখানে تَفْرِيعٌ অথবাاِسْتِئْنَافٌ হয়েছে। মানে, এখান থেকে বাক্য নতুনভাবে শুরু হয়েছে বা বর্ণনার ধারা আগের বিষয় থেকে অন্য বিষয়ে মোড় নিয়েছে।
لِيَنْظُرْ :
যেন দেখে। এটা নির্দেশবাচক ক্রিয়া। لِـ এর আগে কোনো অক্ষর না থাকলে যের হয়। আর এর শুরুতে কোনো অক্ষর থাকলে সাকিন হয়। আবার ক্রিয়ার শেষেও সাকিন হয়। এখানে দেখে বলতে উদ্দেশ্য হল, গবেষণা করে। কারণ, গবেষণা করার দ্বারা মানুষের মনে নতুন একটি জ্ঞান আবিষ্কার হয়। কিন্তু সাধারণভাবে দেখলে সে জ্ঞান আবিষ্কৃত হয় না। আর মানুষ তার নিজস্ব গবেষণায় যা লাভ করে সেটাকে সে কখনও অস্বীকার করতে পারে না। সে যখন তার খাবার নিয়ে চিন্তা করবে, এটা কীভাবে সৃষ্টি হয়, যার উপর তার জীবিকা নির্ভরশীল, সে তখন স্রষ্টার প্রয়োজন অনুভব করবে।
الإِنْسَانُ :
মানে মানুষ। এ শব্দটির মূল ধাতু হল الْإِنْسُ অথবা النَّسْيُ। الْإِنْسُ মানে স্বচ্ছ মনের বন্ধু। الْإِنْسُ থেকে গঠিত হলে এর অর্থ হয়, মানুষ একটি সামাজিক জীব। সে অন্যের সাথে কথা বলার মাধ্যমে নিজের একাকীত্ব দূর করে। আর النَّسْيُ মানে ভুলে যাওয়া। النَّسْيُ থেকে গঠিত হলে অর্থ হয়, মানুষ একটি ভুলো প্রাণী। মানুষ ভুলে যায়। এ দু’টি বৈশিষ্ট্যই মানুষের মাঝে বিদ্যমান।
طَعَامِهِ :
তার খাবার বা নানা প্রকার খাদ্য ও পানীয়। এখানে মানুষ যেন দৃষ্টি দেয় বলতে উদ্দেশ্য হল, তার উচিত, খাদ্য নিয়ে গবেষণা করে দেখা যে, আল্লাহ তায়ালা এ খাদ্য কীভাবে সরবরাহ করেন। আল্লাহ তায়ালা প্রথমে মানুষকে তার সৃষ্টি বিষয় নিয়ে গবেষণা করতে বলেছেন। আর এখন বলছেন খাদ্য নিয়ে গবেষণা করতে, যে খাদ্যের উপর নির্ভর করে সচল থাকে তার জীবন। আল্লাহ যাচনা করেন যে, মানুষ যেন গবেষণা করতঃ তার স্রষ্টার সন্ধান খুঁজে পায়। এসব পরিজ্ঞাত বিষয় নিয়ে গবেষণা করার মাধ্যমে অদৃশ্য ও অজ্ঞাত স্রষ্টার অস্তিত্ব খুঁজে পায়। সুতরাং এটা এ দিকে ইঙ্গিত বহন করে যে, ইসলাম হল একটি জ্ঞানের ধর্ম।
খাদ্য নিয়ে গবেষণা করলে দু’টি বিষয় প্রণিধানযোগ্য হয়ে দেখা দেয়। প্রথমতঃ বাহ্যিক দৃষ্টিতে একটি বীজ মৃত। কিন্তু এই মৃত বীজ থেকে একটি সজিব ও জীবন্ত অঙ্কুর নির্গত হয়ে গাছে রূপ নেয়। এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, একটি অঙ্কুরিত গাছ থেকে একটি মৃত বীজের উদ্ভব ঘটে, আবার উক্ত মৃত বীজকে মাটিতে বপন করার মাধ্যমে জীবিত একটি গাছে রূপান্তরিত করা হয়। এটা কাফেরদের প্রশ্নের মোক্ষম উত্তর যারা পরকালের পুনরুজ্জীবনকে অস্বীকার করে। তাদের উচিত, এ মৃত বীজ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা যে, মৃত্যুর পর পুনরায় জীবনলাভ সম্ভব। দ্বিতীয়তঃ খাদ্যটি কীভাবে, কতগুলো ধাপ পেরিয়ে আহার হিসেবে তার সুমুখে এসেছে, এ খাদ্যটির দানাগুলো কীভাবে আরেকটি দানা থেকে অঙ্কুরিত হয়েছে, অঙ্কুরিত হওয়ার পেছনে কিসের অবদান রয়েছে? কেবল মাটিতে বীজ বপন করলেই অঙ্কুরিত হয় না, যদি না তাতে বৃষ্টির পানির স্পর্শ লাগে। যে আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার জীবিকা নির্বাহের জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন, সেই আল্লাহকে সে কীভাবে অস্বীকার করে?
একটি গাছ যেমন একটি বীজ থেকে উৎপন্ন হয় তেমনি মানুষের পুনঃ সৃষ্টির জন্য তার মেরুদণ্ডে সর্বনিম্নে অবস্থিত পুচ্ছাস্থি যা কখনও ধ্বংস হয় না, সেটা পরকালে পুনরুজ্জীবনের জন্য বীজ হিসেবে কাজ করবে। উক্ত পুচ্ছাস্থি থেকে আবার আমাদেরকে জীবিত করা হবে। যেমন হাদিসে আছে, আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ স. বলেন, ‘দুই ফুঁৎকারের মাঝে চল্লিশ।’ তারা জিজ্ঞাসা করলেন, হে আবু হুরায়রা! চল্লিশ দিন? তিনি বললেন, আমি অস্বীকার করলাম। তারা বললেন, চল্লিশ বছর? তিনি বললেন, আমি অস্বীকার করলাম। তারা বললেন, চল্লিশ মাস? তিনি বললেন, আমি অস্বীকার করলাম। মানুষের সকল অঙ্গই লয় হয়ে যাবে; একমাত্র মেরুদণ্ডের সর্বনিম্নাংশে অবস্থিত পুচ্ছাস্থি (coccyx or tailbone) ছাড়া, এখান থেকেই দ্বিতীয় সৃষ্টিকে গঠন করা হবে।( )

Share this:

Leave a Comment