আল-কালামুন নাফীস ফি শরহে এখতেসার উলূমিল হাদিস

Print Friendly, PDF & Email

দ্বিতীয় দরসের শীট

النوع الأول: الصحيح

تقسيم الحديث إلى أنواعه صحة وضعفا

قال [ابن الصلاح]: اعلم -علمك الله وإياي- أن الحديث عند أهله ينقسم إلى: صحيح، وحسن، وضعيف.

قلت [ابن كثير]: هذا التقسيم إن كان بالنسبة إلى ما في نفس الأمر فليس إلا صحيحا وضعيفا، وإن كان بالنسبة إلى اصطلاح المحدثين فالحديث ينقسم عندهم إلى أكثر من ذلك، كما قد ذكره آنفا هو وغيره أيضا.

প্রথম প্রকারঃ সহীহ

[সহীহ ও দ্বয়ীফ হিসেবে হাদিসের প্রকারভেদ]

ইবনুস সালাহ বলেন, জেনে রাখুন, আল্লাহ আপনাকে এবং আমাকে জ্ঞান দিন, যে, হাদিস বিশারদদের নিকট হাদিসের প্রকার হল, সহীহ, হাসান ও দ্বয়ীফ।

ইবনে কাছীর তার প্রতি মন্তব্য করে বলেন, এই বণ্টনটি যদি স্ব-কেন্দ্রিককে সম্পৃক্ত করে হয় তাহলে সহীহ ও দ্বয়ীফ ছাড়া আর কোনো প্রকার নেই। আর যদি মুহাদ্দিসদের পরিভাষায় হাদিসের প্রকার এর চেয়ে বেশি যা এইমাত্র উল্লেখ করা হয়েছে এবং অন্যান্য প্রকার।

সারকথাঃ

মুহাদ্দিসদের নিকট সর্বপ্রথম হাদিসের প্রকার ছিল সহীহ ও দ্বয়ীফ। অতঃপর ইমাম তিরমিযী এটাকে তিনভাগে ভাগ করে বলেন, সহীহ, হাসান ও দ্বয়ীফ। সুতরাং ইবনুস সালাহ যে হাদিসের তিন প্রকার বলেছেন তা মুহাদ্দিসদের নিকট সংক্ষিপ্ত বণ্টন যা আহলে হাদিসদের পরিভাষায় নির্দিষ্ট হয়েছে। আর ইবনে কাছীর যে বলেছেন, হাদিস স্ব-কেন্দ্রিক দিকের কেন্দ্র করে হাদিস হল দুই প্রকারঃ সহীহ ও দ্বয়ীফ। এটা ছিল শুরু পর্যায়ে তথা ইমাম তিরমীযীর আগে। পরবর্তীতে, এই তিন প্রকারের উপর নির্দিষ্ট হয়ে গিয়েছে। আবার, ইবনে কাছীর যে বলেছেন, মুহাদ্দিসদের পরিভাষায় এর প্রকার অনেক। তা হল, হাদিসের বিস্তারিত বণ্টন।

যেমন, সহীহ, হাসান, দ্বয়ীফ, মুসনাদ, মুত্তাসিল, মারফু‘, মওকুফ, মাকতু‘, মুরসাল, মুনকাতি‘, ইত্যাদি।

تعريف الحديث الصحيح:

قال: أما الحديث الصحيح فهو الحديث المسند، الذي يتصل إسناده بنقل العدل الضابط عن العدل الضابط إلى منتهاه، ولا يكون شاذا ولا معللا.

সহীহ হাদিসের সংজ্ঞাঃ

ইবনুস সালাহ বলেন, সহীহ হাদিস হল উক্ত الحديث المسند বা সনদযুক্ত হাদিস যার সনদটি العدل الضابط থেকে আরেকজন العدل الضابط এর মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত পৌঁছে। এবং এটা شاذ হবে না এবং معلل হবে না।

একটি হাদিস সহীহ হওয়ার জন্য পাঁচটি শর্তঃ

প্রথমঃ হাদিসের সনদটি মুত্তাসিল হবে তথা একজন রাভী যে আরেকজন রাভী থেকে বর্ণনা করেছেন এই ধারা শেষ অবধি বজায় থাকবে। কোথাও কোনো রাভীর নাম বাদ যাবে না বা কোনো রাভী তার শায়খের নাম বিলুপ্ত করবে না।

দ্বিতীয়ঃ العدل বা ন্যায়পরায়ণ হবে।

এর জন্য পাঁচটি শর্তঃ ১। মুসলিম হতে হবে। ২। বালেগ হতে হবে। ৩। জ্ঞানবান হতে হবে। ৪। তাকওয়াবান হতে হবে। ৫। মানবতাপূর্ণ হতে হবে। এমন কোনো কাজ করবে না যা মানবতার হানি ঘটায়। যেমন, অতিমাত্রায় ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা, রাস্তায় পেশাব করা। অর্থাৎ- যে দেশের সংস্কৃতি অনুযায়ী যে কাজটি মানবতার জন্য হানি ঘটায় তা করা যাবে না।

তৃতীয়ঃ الضابط বা মজুবত হওয়া।

অর্থাৎ- تحمل বা হাদিস গ্রহণ করা এবং أداء বা বর্ণনা করার ক্ষেত্রে الضابط বা সুদৃঢ়কারী হতে হবে। এজন্য হল দু’টি শর্ত। একঃ সজাগ হতে হবে। দুইঃ সমঝদার হতে হবে। অর্থাৎ- হাদিস গ্রহণ করা ও বর্ণনা করার ক্ষেত্রে সজাগদৃষ্টি সম্পন্ন ও সমঝদার হতে হবে। হাদিস হয়তো সে মুখস্ত বর্ণনা করবে, অথবা তার রচনা দেখে বর্ণনা করবে, অথবা হাদিস সমার্থ দিয়ে বর্ণনা করবে। সমার্থ দিয়ে হাদিস বর্ণনা করতে গেলে তাকে অবশ্যই অর্থের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। এই দুইটি শর্ত যে রাভীর মধ্যে পাওয়া যাবে সে ثقة বলে আখ্যায়িত হবে।

চতুর্থঃ شاذ হবে না।

شاذ হল কোনো ثقة রাভী অন্যান্য সকল ثقة রাভী যেভাবে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন সেভাবে বর্ণনা না করে ভিন্নভাবে বর্ণনা করা যার ফলে সাংঘর্ষিক হয়। এর ব্যাখ্যা পরে জানব ইন শা আল্লাহ।

পঞ্চমঃ معلل বা ত্রুটিপূর্ণ হবে না।

معلل হল হাদিস বিশারদগণ হাদিসে এমন একটি সূক্ষ্ম ত্রুটি দেখতে পান যার কারণে হাদিসটি সহীহ হয় না। যেমন, ব্যাংকের লোকেরা নকল টাকা বুঝতে পারেন তেমনি হাদিস বিশারদগণ হাদিসের মধ্যে সূক্ষ্ম ত্রুটি অনুধাবন করতে পারেন। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত জানব ইন শা আল্লাহ।

যদি কোনো হাদিসে এই ৫টি শর্ত পাওয়া যায় তাহলে হাদিসটি সহীহ বলে গণ্য হবে।

ثم أخذ يبين فوائده، وما احترز بها عن المرسل والمنقطع والمعضل والشاذ، وما فيه علة قادحة، وما في راويه نوع جرح.

সহীহ হাদিসের সংজ্ঞা দেয়ার পর ইবনুস সালাহ তার গ্রন্থে এর উপকারিতা বর্ণণা করেছেন এবং এটা বলে যে মুরসাল, মুনকাতি‘, মু‘দ্বল, শায ও যে হাদিসের মধ্যে ত্রæটিপূর্ণ কারণ রয়েছে এবং রাভীর মধ্যে যে জারহ রয়েছে তা বর্ণনা করেছেন।

قال: وهذا هو الحديث الذي يحكم له بالصحة، بلا خلاف بين أهل الحديث، وقد يختلفون في بعض الأحاديث لاختلافهم في وجود هذه الأوصاف، أو في اشتراط بعضها كما في المرسل.

ইবনুস সালাহ বলেন, এই হাদিসকে সহীহ বলে হুকুম দেয়া হবে। এ বিষয়ে আহলে হাদিসদের মাঝে কোনো মতবিরোধ নেই। তবে তাদের মাঝে এখতেলাফ কিছু কিছু হাদিসের মাঝে উক্ত গুণাবলীগুলো পাওয়া যাওয়ার ক্ষেত্রে মতভেদ থাকার কারণে, অথবা কিছু বিষয়ে শর্ত থাকার কারণে। যেমন হাদিস মুরসাল, অর্থাৎ- তাবেয়ীর কথা, রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন …। এখানে সাহাবীর নাম থাকে না। এই হাদিস মুরসাল দিয়ে সহীহ হাদিসের মতো দলীল দেয়া যাবে কিনা।

قلت: فحاصل حد الصحيح أنه المتصل سنده بنقل العدل الضابط عن مثله حتى ينتهي إلى رسول الله – صلى الله عليه وسلم – أو إلى منتهاه من صحابي أو من دونه، ولا يكون شاذا، ولا مردودا، ولا معللا بعلة قادحة، وقد يكون مشهورا أو غريبا،

ইবনে কাছীর বলেন, সহীহর সংজ্ঞার সারমর্ম হল, উক্ত হাদিস যেটার সনদ মুত্তাসিল হবে বা সংযুক্ত হবে, কোথাও বিচ্ছিন্ন হবে না, এবং বর্ণনাটি একজন العدل الضابط তার মতো আরেকজন থেকে বর্ণনা করবেন। যাবৎ এটা রাসূলুল্লাহ স. পর্যন্ত পৌঁছবে, অথবা শেষ পর্যন্ত সাহাবী অথবা তাবেয়ী বা যার থেকে কথাটি বর্ণিত হয়েছে তার পর্যন্ত পৌঁছবে। এবং শায হবে না, পরিত্যক্ত হবে না, কোনো ত্রুটির কারণে ত্রুটিযুক্ত হবে না। তবে এটা মাশহুর অথবা গরীব হতে পারে।

ইবনে কাছীরের সংজ্ঞায় যে নতুন বিষয় পেলাম তা হল, শেষ পযন্তটি রাসূলুল্লাহ স. হতে পারেন, সাহাবী হতে পারেন এবং তাবেয়ীও হতে পারেন।

সাহাবীর কথাকে মওকুফ বলা হয়, আর তাবেয়ীর কথাকে আছর বলা হয়। এসব পরিভাষাগুলো পরে এসেছে। আগে হাদিসবিশারদদের নিকটে সবগুলোকে হাদিস বলে আখ্যায়িত করা হত। সে দৃষ্টিকোণ থেকে ইবনে কাছীরের সংজ্ঞাটি উপস্থাপিত হয়েছে।

মাশহুর বলা হয় যেসব হাদিসগুলোর প্রতিটি স্তরে ৩/৪ জন করে রাভী থাকেন। আর গরীব বলা হয়, যেসব হাদিসের বর্ণনাকারী কোনো স্তরে একজন রাবি একক হয়েছেন।

তবে ইবনে কাছীর সহীহর সংজ্ঞায় যে ولا مردودا শব্দটি যোগ করেছেন তার ব্যাখ্যা তিনি করেননি যে, তিনি কী উদ্দেশ্য করেছেন। হতে পারে তিনি এর দ্বারা মুনকার উদ্দেশ্য করেছেন যেটা সনদ হলেও পরিত্যাজ্য। কারণ, তা কোনো হাদিসই নয়।

হাফেযদের নিকটে সহীহ হওয়ার বিষয়টি পার্থক্যপূর্ণ। অর্থাৎ- অধিক সহীহ হওয়ার ক্ষেত্রে। যেমন আহমত ও ইসহাক বলেন, الزهري عن سالم عن أبيه – সনদটি অধিক সহীহ। ইবনুল মাদীনী ও ফাল্লাস বলেন, محمد بن سيرين عن عبيدة عن علي – সনদটি অধিক সহীহ। ইবনে মাঈন বলেন, الأعمش عن إبراهيم عن علقمة عن ابن مسعود -সনদটি অধিক সহিহ। ইমাম বুখারী বলেন, مالك عن نافع عن ان عمر -সনদটি অধিক সহীহ। আবার কেউ বলেন, الشافعي عن مالك… ।

আহমদ শাকের এখতেসার উলূমিল হাদিসের পাদটিকায় বলেন, এই যে অধিক সহীহ হওয়ার বিষয়টি সাধারণভাবে নয়। বরং এটা অঞ্চল ভিত্তিক অথবা বিভিন্ন সনদ বিভিন্ন সাহাবীর নামের কারণে অধিক সঠিক। একেক অঞ্চলে একেকটি অধিক সহীহ।

Share this:

Leave a Comment